হ্যালো বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন।আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। বন্ধুরা বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের একটি বিদেশি ফল ব্যাপক পরিমাণ চাষ হচ্ছে ফলটি হল ড্রাগন। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মার্কেটে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বন্ধুরা ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম? ড্রাগন ফল চাষ করতে হয় কিভাবে? ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি? এবং ডাগন ফল সম্পর্কে আমরা অনেক প্রশ্নের উত্তর জানিনা।
ড্রাগন ফল এক ধরনের ফনিমাংসা প্রজাতির ফল। ড্রাগন ফল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতে খুব সুস্বাদু। পাতা বিহীন এই ফলটি দেখতে ডিম্বাকার এবং উজ্জ্বল গোলাপী বা লাল রঙের হয়ে থাকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই ফলের বাইরের খোসা দেখতে রুপকথার ড্রাগনের পিঠের মতো।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
বন্ধুরা আমরা অনেকেই বাজারে ড্রাগন ফল দেখে থাকি। কিন্তু আমরা জানি না ড্রাগন ফল কিভাবে খেতে হয়। আজকে আমি আপনাদের সাথে ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম শেয়ার করব। প্রথমে ড্রাগন ফলটি ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন। তারপর ছুরি দিয়ে ড্রাগন ফলটি কেটে নেবেন।ড্রাগন ফলের ওরের খোসাটি ফেলে দেবেন বা ছাড়িয়ে নেবেন। তারপর ভেতরের ফলটি খেয়ে নেবেন। আপনার না খেতে পারলে আমাকে দিয়ে যাবেন।
ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি
বন্ধুরা আমরা উপরে ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম জানলাম। এবার জানবো ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি? আমরা অনেকেই মার্কেটে ড্রাগন ফল দেখে থাকি। কিন্তু আমরা জানি না ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি? বর্তমান সময়ে ড্রাগন ফলের সাইজ বা আকার দাম নির্ধারণ করা হয়। তবে ড্রাগন ফল ওজন করে বিক্রি করা হয়।
বন্ধুরা বাংলাদেশের বিভিন্ন মার্কেটে বিভিন্ন দামের ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে।তবে বেশির ভাগ মার্কেটে ড্রাগন ফল ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন সুপারশপে এক কেজি ড্রাগন ফল ৪০০ টাকা ৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ড্রাগন ফলের সাইজের ওপর নির্ভর করে দাম কম বেশি হয়ে থাকে। আপনারা ডাগন ফল কেনার পূর্বে দোকানে গিয়ে দাম জেনে নেবেন।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
বন্ধুরা পৃথিবীতে সকল বস্তুর উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে। বিভিন্ন বস্তু থেকে শুরু করে খাদ্যদ্রব্য উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে। তেমনি ড্রাগন ফলের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে। চলুক জেনে নেওয়া যাক ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা।
এই পোস্ট গুলা পড়তে পারেনঃ
ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ড্রাগন ফল পিতায়া নামেও পরিচিত। এটি একটি খুবই পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত ফল। এই ফলটি মূলত দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। ড্রাগন ফলের বিভিন্ন রকমের প্রজাতি রয়েছে, তবে সাধারণত এটি লাল পাওয়া যায়। এর স্বাদ মিষ্টি এবং রসালো, যা অনেকেরই পছন্দের। ড্রাগন ফলের অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
পুষ্টিগুণ
ড্রাগন ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর। ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি, বি১, বি২, এবং পেন্টোথেনিক অ্যাসিড রয়েছে। এই ভিটামিনগুলো শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা শরীরকে ক্ষতিকর মুক্ত রেডিক্যালের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সহায়তা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি কমায়।
পাচনশক্তি উন্নত করে
ড্রাগন ফলে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং খাবারকে সঠিকভাবে হজম করতে সহায়তা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
ড্রাগন ফলে হালকা এবং রসালো হওয়ায় স্ন্যাক হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। ফাইবারের উপস্থিতি থাকাই অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
ড্রাগন ফল ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়া বাড়াতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এটি রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য
ড্রাগন ফলে উপস্থিত ভিটামিন সি ত্বককে উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাধ্যমে ত্বকের কোষগুলোকে রক্ষা করে। চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও এটি উপকারী, কারণ এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো
ড্রাগন ফলে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে শরীরের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা
উপরে আমরা ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। চলুন জেনে নেওয়া যাক ড্রাগন ফলের অপকারিতা। অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে এলার্জি হতে পারে। ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে চুলকানি ত্বকের র্যাশ বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন গ্যাস পেট ফাঁপা বা ডায়রিয়া ড্রাগন ফলে উৎসব ফাইবারের কারণে যারা ফাইবার সহ্য করতে পারে না। বাজারে ড্রাগন ফল বিভিন্ন প্রজাতি পাওয়া যায়, তবে কিছু ফল রাসায়নিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়। এই ধরনের ফল খাওয়ার ফলে শরীরে অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক প্রবাহিত হতে পারে, যা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময়
বন্ধুরা ড্রাগন ফল দিনের সব সময় খাওয়া যায়। তবে সকাল বেলা ড্রাগন ফল খেলে সারাদিনের শক্তি পাওয়া যায়। দুপুরে বা সন্ধ্যার দিকে ড্রাগন ফল খাওয়া খুব উপকারী এটি স্বাস্থ্যকর। রাতে খাবারের পরে হালকা ডাগন ফল খাওয়া ভালো।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ডাগন ফল খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে । যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী চলুন জেনে নেওয়া যাকঃড্রাগন ফলে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ মা ও শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে করতে সহযোগিতা করে।নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। ড্রাগন ফল নিয়মিত খেলে শরীরে রক্তের চাপ স্বাভাবিক থাকে যার ফলে ডায়াবেটিস এর মত নানারকম রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় বা মুক্তি পাওয়া যায়।এছাড়াও ড্রাগন ফল গর্ভবতী ব্যক্তিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার।
ড্রাগন ফল খেলে কি পায়খানা লাল হয়
হ্যাঁ, ড্রাগন ফল খাওয়ার পর পায়খানা লাল রঙ ধারণ করতে পারে। এটি মূলত ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা পিগমেন্টের কারণে ঘটে, যা আমাদের শরীরে প্রতিক্রিয়া করে এবং কিছু সময়ের জন্য পায়খানার রঙ পরিবর্তন করতে পারে।
এটি সাধারণত ক্ষতিকারক নয় এবং শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তবে, যদি রঙ পরিবর্তন অব্যাহত থাকে বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি
টবে ড্রাগন ফল চাষ একটি সহজ ও লাভজনক পদ্ধতি, যা অল্প জায়গায় করা সম্ভব। নিচে ধাপে ধাপে টবে ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি দেওয়া হলো—
ভালো টব নির্বাচন করুন
- ১৫-২০ ইঞ্চি গভীর এবং প্রশস্ত টব নির্বাচন করুন।
- মাটির টব বা প্লাস্টিকের ড্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
- টবের নিচে পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে।
মাটির প্রস্তুতি ও নির্বাচন করুন
- বেলে-দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো।
- মাটির মিশ্রণ:
- ৫০% দোআঁশ মাটি
- ৩০% পচা গোবর সার
- ১০% বালু
- ১০% ভার্মি কম্পোস্ট বা খৈল
- মাটিতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে নিন।
চারা রোপণ
- সুস্থ ও পরিণত ড্রাগন ফলের কাটিং সংগ্রহ করুন (৩০-৪০ সেমি)।
- কাটিং টবে রোপণের আগে ১-২ দিন শুকিয়ে নিন।
- টবে ১-২টি কাটিং রোপণ করুন এবং মাটিতে ২-৩ ইঞ্চি গভীরে পুঁতে দিন।
- কাটিং রোপণের পর হালকা পানি দিন।
পরিচর্যা
পানি দেওয়া:
- গ্রীষ্মকালে সপ্তাহে ২-৩ বার পানি দিতে হবে।
- বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি এড়িয়ে চলতে হবে।
- শীতকালে কম পানি দিতে হবে।
সার প্রয়োগ:
- প্রতি মাসে জৈব সার (গোবর সার, ভার্মি কম্পোস্ট) দিন।
- ৩ মাস পর পর ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার ২:১:১ অনুপাতে মিশিয়ে দিতে পারেন।
আলো ও তাপমাত্রা:
- ড্রাগন ফলের গাছ পর্যাপ্ত সূর্যালোক পছন্দ করে, তাই রোদে রাখতে হবে।
- ছায়াযুক্ত স্থানে রাখলে ফলন কমে যেতে পারে।
খুঁটি ও মাচা:
- গাছ লতানো প্রকৃতির, তাই শক্ত খুঁটি বা মাচা দিতে হবে।
- প্লাস্টিক বা বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করতে পারেন।
রোগ ও পোকামাকড় দমন
- অতিরিক্ত পানি জমলে শিকড় পচে যেতে পারে।
- ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধে নির্দিষ্ট ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
- পাতা বা ডাঁটা পচলে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলুন।
ফলন ও সংগ্রহ
- ৮-১২ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসবে।
- ফুল ফোটার ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়।
- পরিপক্ব ফল উজ্জ্বল লাল বা হলুদ রঙের হয়।
শেষ কথাঃ ড্রাগন ফল
আজকের আর্টিকেল এখানে শেষ করছি। এমন শিক্ষনীয় আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথে থাকুন। আপনারা যদি কোন কিছু বলতে চান। সে ক্ষেত্রে কমেন্টের মাধ্যমে জানান।
2 thoughts on “ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি | ড্রাগন ফল এর উপকারিতা | ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম”